বাঘাবাড়ি নৌবন্দর চ্যানেলে নাব্যতা সংকট
বাঘাবাড়ি নৌবন্দর চ্যানেলে নাব্যতা সংকট
tmnews24 রুমী খোন্দকার, পাবনা প্রতিনিধি
জেলার বেড়ায় যমুনা নদীতে নাব্যতা সংকটের কারণে রাসায়নিক সার, ক্লিংকার ও জ্বালানি তেলবাহী জাহাজ ধারণক্ষমতার কম মাল নিয়ে বাঘাবাড়ি নৌ-বন্দরে আসছে। উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় জ্বালানি তেল ও রাসায়নিক সার চাহিদার সিংহভাগ বাঘাবাড়ি রিভারাইন অয়েল ডিপো ও নৌ-বন্দর থেকে জোগান দেওয়া হয়। সেচ মৌসুমে এখান থেকে প্রতিদিন ৩৬ লাখ লিটার জ্বালানি তেল ও হাজার হাজার বস্তা রাসায়নিক সার সরবরাহ করা হয়। যদি বিআইডাব্লিউটিএ ড্রেজিং দ্রুত শুরু না করে, তাহলে নাব্যতা সংকট আরো প্রকট আকার ধারণ করে এ অঞ্চলে সেচ ও সার নির্ভর বোরো আবাদ ব্যাহত হতে পারে বলে বন্দর কর্তৃপক্ষ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
বাঘাবাড়ি নৌবন্দর কর্তৃপক্ষ জানান, স্বাভাবিকভাবে রাসায়নিক সার ও পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলের জন্য নদীতে ১০ ফুট পানির গভীরতা প্রয়োজন। বাঘাবাড়ি বন্দর নৌ-চ্যানেলের নাকালিয়া ও মোল্লারচরে নাব্যতা সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এছাড়া মোহনগঞ্জ থেকে দৌলতদিয়া পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার নৌপথের মোহনগঞ্জ, পেচাকোলা, হরিরামপুর, কল্যাণপুর, চরসাফুলা, চরশিবালয়, নাকালী ও রাকশা পয়েন্টে পানির গভীরতা কমে ৮ থেকে ৯ ফুটে দাঁড়িয়েছে। সরু হয়ে গেছে নৌচ্যানেল। দেখা দিয়েছে নাব্যতা সংকট। ফলে চলতি মাসের প্রথম থেকে জাহাজ তেলবাহী জাহাজ ১০ লাখ লিটারের স্থলে সাত লাখ লিটার তেল নিয়ে বাঘাবাড়ি বন্দরে আসছে। রাসায়নিক সার, ক্লিংকার, চাল, গমসহ অন্যান্য পণ্যবাহী জাহাজ পাটুরিয়াতে কিছু মাল খালাস করে ছোট ছোট নৌকা ও লাইটারেজ জাহাজে করে বাঘাবাড়ি বন্দরে আনা হচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীদের জাহাজ প্রতি ৪০ থেকে ৫৫ হাজার টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করতে হচ্ছে।
কয়েকজন জাহাজ মাস্টার জানান, দৌলতদিয়া থেকে বাঘাবাড়ি নৌবন্দর পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার নৌপথের সাতটি পয়েন্টে পানির গভীরতা কমে দাঁড়িয়েছে ৮ থেকে ৯ ফুট। নৌচ্যানেলে জেগে উঠছে ডুবোচর। মোল্লারচর ও নাকালিয়া পয়েন্টে জ্বালানি তেলবাহী জাহাজ চলাচলের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ওই পয়েন্টে জেগে উঠা চরের পরিধি বেড়ে যাওয়ায় দিনদিন চ্যানেলটি আরো সরু হয়ে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যেই ডুবোচরে পণ্যবাহী জাহাজ আটকা পড়ছে। দ্রুত ড্রেজিং না করা হলে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
বিপিসি’র বাঘাবাড়ি রিভারাইন অয়েল ডিপোর যমুনা কোম্পানির এক কর্মকর্তা জানান, বাঘাবাড়িতে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা তিনটি তেল বিপণন কোম্পানির ডিপোতে প্রায় চার কোটি ৫০ লাখ লিটার ডিজেল মজুদ আছে। আরো প্রায় এক কোটি ২৫ লাখ লিটার জ্বালানি তেলভর্তি ১২টি জাহাজ বাঘাবাড়ি বন্দরের বড়াল নদের বিভিন্ন পয়েন্টে আনলোডের অপেক্ষায় নোঙর করে আছে। নাব্যতা সংকটে জাহাজগুলো ধারণক্ষমতার কমলোড নিয়ে বাঘাবাড়ি ডিপোতে আসছে। তিনি বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে উত্তরাঞ্চলে জ্বালানি তেল (ডিজেল) সংকটের কোনো আশঙ্কা নেই।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পাবনা হাইড্রোলজি বিভাগসূত্রে জানা যায়, অপ্রত্যাশিতভাবে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ কমে গেছে। ফলে যমুনা নদীতে নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে। তিস্তা নদীতে পানি প্রবাহ না বাড়লে যমুনায় নাব্যতা সংকট আরো প্রকট আকার ধারণ করবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের ধারণা।
বিআইডাব্লিউটিএ আরিচা অফিসের একটি সূত্র জানায়, প্রতি বছরের এ সময়ে দৌলতদিয়া থেকে বাঘাবাড়ি পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার নৌ-পথে নাব্যতা সংকট দেখা দেয়। বর্তমানে এ রুটে ৮ থেকে ৯ ফুট আবার কোথাও কোথাও ৭ থেকে ৮ ফুট পানির গভীরতা রয়েছে। নৌ-চ্যানেল সচল রাখার জন্য নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ড্রেজিংকরা হবে।