Header Ads

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম ★শিক্ষণীয় ইতিহাস★ ***যারা ঘটনাটি জানেন না বা কখনো পড়েন নি, তাদের সকলের কাছে অনুরোধ রইলো যে, সময় করে ঘটনাটির আগা-গোড়া সব পড়ে নিবেন। কেননা এ ঘটনা প্রত্যেকের চিন্তাধারা পরিবর্তনের জন্য সহায়ক হবে। ★★★শিক্ষার মূল বিষয়ঃ- বিশ্বনবী (সাঃ)-কে ভালবাসার এক অপূর্ব দৃষ্টান্ত এবং আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলের পছন্দনীয় মানুষের মূল্য সৌন্দর্যতা এবং দুনিয়ার সব কিছুর থেকে বেশি। হ্যাঁ, বন্ধুরা বলছিলাম আল্লাহর রাসুলের প্রাণপ্রিয় সেই সাহাবীদের মধ্য থেকে একজনের জীবনের একটি ঘটনা। এই সেই বিখ্যাত সাহাবী যার নাম সা'দ আস সুলুমী (রাঃ)। এ সেই সাহাবী যে সাহাবীদের মধ্যে ছিল সবার থেকে বেটে, কুৎসিত, কালো এবং হত-দরিদ্র। মানুষ যাই হোক কিন্তু প্রত্যেকেরই থাকে বিবাহের ইচ্ছা। কিন্তু তার দারিদ্রতা এবং দেখতে কুৎসিত হওয়ায় কেহই তাঁকে মেয়ে দিতে রাজি হয় না। সে মনের দুঃখ নিয়ে দয়ার সাগর বিশ্বনবী (সাঃ)-এর কাছে গেল এবং বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমিও কি জান্নাতি??? বিশ্বনবী (সাঃ) বললেন, হে সা'দ তুমি এমন কথা কেন বলছো??? সা'দ (রাঃ) বললেন, হে রাসুল (সাঃ) আমার মনে হয় আমি জান্নাতি না! কেননা, প্রত্যেক জান্নাতিই নাকি আখেরাতে দুনিয়ার সবকিছুর থেকে ধনী এবং সৌন্দতার অধিকারী হবে! এবং আল্লাহ যাদেরকে ভালবাসেন তারা নাকি জান্নাতি। আর আল্লাহ যাদেরকে ভালবাসেন তাঁদেরকে তো সকলেরই ভালবাসা উচিত। কিন্তু আমাকে যখন কেউ পছন্দ করে না, তাহলে কীভাবে আমি জান্নাতি??? বিশ্বনবী (সাঃ) তাঁর মনের কষ্ট বুঝতে পারলেন এবং বললেন, হে সা'দ আমি তোমাকে অমুক এলাকার আমার আরেক সাহাবী আব্দুল ওহহাবের একমাত্র কন্যার সাথে ২০০ দেরহামের বিনিময়ে বিবাহ দিলাম। মাসয়ালা হচ্ছে, বিশ্বনবী (সাঃ) যদি কাউকে কারো সাথে বিবাহ দিতেন তাহলে বীনা সাক্ষীতে এবং কন্যার অভিভাবক ও কন্যার অসম্মতি থাকলেও বিবাহ হয়ে যেত এবং সেই মেয়ের সেই ছেলেকে স্বামী হিসেবে গ্রহন করা ওয়াজিব হয়ে যেত। যাই হোক, সা'দ সুলুমী (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমি একসাথে কখনো ২০০ দেরহাম দেখিই নাই। তখন নবী কারীম (সাঃ) বললেন, তুমি ওমর, ওসমান ও আলী (রাঃ)-এর কাছে যাও এবং আমার কথা বল। সা'দ (রা) তাঁদের কাছে গেলেন এবং নবীজীর কথা বললেন। তখন ওমর (রাঃ) তাঁকে দিলেন ২০০ দেরহাম, ওসমান (রাঃ) দিলেন ২০০ দেরহাম, আলী (রাঃ) দিলেন ২০০ দেরহাম। সেই ৬০০ দেরহাম নিয়ে সে নবীজীর কাছে আসলেন এবং নবীজী তাঁকে আব্দুল ওহহাবের কাছে যেতে বললেন। আব্দুল ওহহাব (রাঃ) ছিলেন তার এলাকার বিশিষ্ট ধনী এবং প্রভাবশালী। এবং তার কন্যা ছিলেন অপরূপা সুন্দরী এবং শিক্ষিতা। সা'দ (রাঃ) আব্দুল ওহহাবের কাছে গেলেন এবং তাঁকে সালাম করে বিবাহের ঘটনা বললেন। আব্দুল ওহহাব এ বিবাহকে অস্বীকার করলেন এবং বললেন তোমার মত হত-দরিদ্র, কুৎসিত ছেলের কাছে আমার অপরূপা সুন্দরী ধনী মেয়ের বিবাহ হতে পারে না। সা'দ (রাঃ) বললেন, আপনি আপনার মেয়েকে আমার কাছে দ্যান আর নাই দ্যান তবে মনে রাইখেন, বিশ্বনবী (সাঃ) আমার সাথে আপনার মেয়েকে বিবাহ দিয়েছেন, অতএব আপনার মেয়ে আমার স্ত্রী এবং আপনি আমার শশুড়। এ কথা বলে সে চলে যাচ্ছিল। কিন্তু ঘরের মধ্য থেকে আব্দুল ওহহাবের কন্যা সব কথাই শুনছিলেন। তিনি তাঁর পিতাকে বললেন, ওহে আব্বাজান! আপনি কাকে ফিরিয়ে দিচ্ছেন, যাকে কিনা স্বয়ং বিশ্বনবী (সাঃ) নিজে পাঠিয়েছেন!!! অতএব তাঁকে ফিরিয়ে দিয়ে বিশ্বনবী (সাঃ)-এর সাথে এত বড় বেয়াদবি করবেন না এবং আমাদের দুনিয়া-আখেরাতে উভয় জগতের অকল্যাণ বয়ে আনবেন না। অতএব সে যতই গরীব হোক এবং যতই দেখতে কুৎশ্রী হোক না কেন আমি তাঁকে খুশি মনে আমার স্বামী হিসেবে মেনে নিলাম। অতএব আপনিও তাঁকে মেনে নেন এবং আজকেই আমাদের বাসর ঘরের ব্যবস্থা করে দেন (সুবহানআল্লাহ)!!! তো আব্দুল ওহহাব (রাঃ) হযরত সা'দ আস সুলুমী (রাঃ)-কে যেতে বারন করলেন এবং বললেন, সে তাঁকে তাঁর মেয়ের জন্য মেনে নিয়েছেন (আলহামদুলিল্লাহ)!!! তো সা'দ (রাঃ) একথা শোনার পরে অত্যান্ত আনন্দিত হলেন এবং চিন্তা করলেন, ২০০ দেরহাম তো আজকে রাত্রে বাসর ঘরে স্ত্রীকে দেবে কিন্তু বাকি ৪০০ দেরহাম দিয়ে নিজের জন্য এবং স্ত্রীর জন্য কিছু নতুন পোশাক ও কসমেটিক্স কিনবেন। তাই সেগুলো কেনার জন্য সে বাজারে রওয়ানা হলেন। কিন্তু বাজারে গিয়ে সে দেখলেন, বাজারে হুলস্থুল লেগে গেছে এবং সবাই দোকান-পাট বন্ধ করে ছোটাছুটি করছে আর বলছে আব্দুলাহর পুত্র মোহাম্মদ (সাঃ)-এর সাথে কাফেরদের সাথে অমুক ময়দানে যুদ্ধ শুরু হয়েছে!!! একথা শুনে সা'দ সুলুমী (রাঃ) ভাবলেন, আমার প্রাণের প্রিয় নবীর সাথে যুদ্ধ বেধেছে। অতএব আমার প্রাণের রাসুলকে যুদ্ধের ময়দানে রেখে কীভাবে আমি বাসর ঘর করি??? অতএব তিনি নিজের জন্য এবং বিবির জন্য কেনাকাটার চিন্তা বাদ দিয়ে তাঁর কাছে রক্ষিত ৬০০ দেরহামের ২০০ দেরহাম দিয়ে একটি ঘোড়া, ২০০ দেরহাম দিয়ে একটি তরবারী এবং বাকী ২০০ দেরহাম দিয়ে একটি ঢাল কিনলেন। তারপরে ঢাল-তলোয়ার নিয়ে ঘোড়া ছুটিয়ে চললেন যুদ্ধের ময়দানে। (আল্লাহু আকবার) চিন্তা করে দেখুন!!! ওহে মুসলাম!!! চিন্তা করে দেখুন নবীর প্রতি কতটুকু মুহব্বত থাকলে নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে এবং প্রত্যেকটা যুবকের বহুল কাঙ্খিত ধনীর দুলালি অপরূপা সুন্দরী নিজের বিবির সাথে বাসর রাতে আনন্দের চিন্তা বাদ দিয়ে যুদ্ধের ময়দানে যোগদান করা সম্ভব হয়?!!? সা'দ (রাঃ) মুখে নেকাব পড়ে যুদ্ধের মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়লেন, কেননা তিনি ভাল করে জানেন যে, তাঁকে তাঁর দয়াল নবী যুদ্ধের মাঠে দেখলে অবশ্যই তাকে বলতেন, হে সা'দ তুমি যুদ্ধে কেন এসেছো, তোমারতো আজকে বাসর রাত। তোমারতো আজকে তোমার বিবির সাথে থাকার কথা। যাও যাও তুমি তোমার বিবির কাছে চলে যাও এবং তার সাথে আনন্দ করো। তাই তিনি যুদ্ধের মাঠে নিকাব পড়ে যোগদান করলেন। তিনি যুদ্ধ করতে করতে অনেক কাফেরকে জাহান্নামে পাঠিয়ে নিজেও চরমভাবে আহত হলেন। এদিকে যুদ্ধও শেষ এবং মোসলমানদের বিজয় হল। কিন্তু সা'দ (রাঃ) রক্তাক্ত শরীর নিয়ে কাতরাচ্ছিলেন। অন্যান্য সাহাবীরা তাঁকে রাসুলুল্লাহর কাছে নিয়ে আসলেন। তিনি তখনও নেকাব পড়া ছিলেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর নেকাব খুলে দেখলেন যে, এতো সা'দ!! বিস্ময়ের দৃষ্টিতে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর কাছে জিজ্ঞেস করলেন, হে সা'দ! তুমি এখানে কি করে এলে? তোমারতো আজকে তোমার বিবির সাথে থাকার কথা!!! সা'দ (রাঃ) বাজারে যাওয়ার পরে যুদ্ধের যে সংবাদ পেয়েছিলেন তা বিশ্বনবীর কাছে খুলে বললেন। নবীজী তাঁকে বললেন, হে সা'দ তাহলে তুমি যুদ্ধে নেকাব কেন পড়েছো??? আল্লাহর নবীর সাহাবী হযরত সা'দ সুলুমী (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমি সুনিশ্চিত ছিলাম যে, আপনি যদি আমাকে যুদ্ধের মাঠে দেখতেন তাহলে অবশ্যই আমাকে যুদ্ধ করতে দিতেন না, বরং আমাকে আমার স্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দিতেন। কিন্তু হে আমার প্রাণের রাসূল (সাঃ) যেখানে আপনি যুদ্ধের মাঠে যুদ্ধ করবেন সেখানে আমি কিভাবে বাড়িতে আমার বিবির সাথে আনন্দ-ফুর্তিতে লিপ্ত হতে পারি ?!!? তাহলে সেই হাশরের মাঠে এই মুখ নিয়ে কিভাবে আমার প্রাণের রাসুলের সামনে দাঁড়াবো??? (আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার)। আল্লাহর নবী অঝোর নয়নে কাঁদতে লাগলেন। তাঁর দাঁড়ি মোবারক বেয়ে চক্ষু মোবারক থেকে পানি গড়িয়ে সা'দ (রাঃ)-র গায়ে পড়তে লাগল। কিছুক্ষন পড়ে সা'দ রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু এহধাম ত্যাগ করলে। বিশ্বনবী (সাঃ) কাঁদতে লাগলেন। কিছুক্ষন পড়ে হাসতে লাগলেন। তার কিছুক্ষন পরে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলেন। সাহাবীরা এর ভেদ রহস্য কিছুই বুঝতে পারলেন না। তাঁরা আদবের সহিত নবীজীর কাছে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ আপনি কিছুক্ষন অঝোর নয়নে কাঁদলেন, আবার কিছুক্ষন হাসতে থাকলেন, তার কিছুক্ষন পড়ে আবার আপনার চেহারা মোবারককে অন্য দিকে ঘুড়িয়ে নিলেন। কিন্তু এর কিছুই আমরা বুঝতে পারলাম না। বিশ্বনবী (সাঃ) বললেন, হে আমার প্রাণের সাহাবীরা শোনো, আমি সা'দ (রাঃ)-কে হারানোর কষ্টে কাঁদতে থাকলাম। কিন্তু তাঁর মহব্বতের প্রমানের উপর আল্লাহ এত সন্তোষ্ট হয়েছেন যে, তাঁর এই আত্মত্যাগের কারনে আল্লাহ জান্নাতের মহা সুন্দরী হুরদেরকে তাঁর স্ত্রী হিসেবে দান করলেন। এবং সেই হুরদেরকে হুকুম দিলেন, তোমরা তোমাদের স্বামীক জান্নাতে নিয়ে আস। তাই আমি {বিশ্বনবী (সাঃ)} খুশিতে হাসতে থাকলাম। আর যখন হুরগণ তাঁদের স্বামীকে জান্নাতে নিয়ে যাওয়ার জন্য দৌড় শুরু করলেন যে, কে আগে তাঁর স্বামীক নিয়ে জান্নাতে যাবে তখন দৌড়ের কাড়নে কারও বুকের ওড়না সরে যাচ্ছিল, কারও পায়ের কাপড় হাটুর উপরে উঠে যাচ্ছিল, আবার কারও হাতের কাপড় সরে যাচ্ছিল!!! তাই আমি {বিশ্বনবী (সাঃ)} এই দৃশ্য দেখে অন্য দিকে মুখ ঘুড়িয়ে নিয়েছি। (নারায়ে তাকবীর, আল্লাহু আকবার, নারায়ে তাকবীর, আল্লাহু আকবার...) নিশ্চয়ই এ ঘটনায় প্রত্যেক ধনী মেয়ের পিতার জন্য এবং নায়েবে রাসুলকে মহব্বতের ব্যাপারে প্রত্যেক মুরিদানের জন্য অকল্পনীয় শিক্ষার বিষয় রয়েছে। আল্লাহ আমাদের সকলকে সঠিক বুঝ দান করুন। 
               "আমীন"
x
Blogger দ্বারা পরিচালিত.