ইয়াবা পাচারের নয়া কৌশল ইয়াবা পাচারের অভিনব কৌশল, বেকায়দায় আইন
ইয়াবা পাচারের নয়া কৌশল
ইয়াবা পাচারের অভিনব কৌশল, বেকায়দায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী
সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে
ইয়াবার থাবা ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তত্পরতা যেমন বাড়ছে তেমন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পাচারকারীদের কলাকৌশল। গরুর পেটে অপারেশন করে মাদক রেখে পাচারের ঘটনা ঘটেছে অতীতে। ইয়াবা বহনের অভিনব কৌশল আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কল্পনাকেও এখন হার মানাচ্ছে। ইয়াবা বহনের বিশেষ কৌশল রীতিমতো বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে। বিশেষ পন্থায় রাজধানীতে প্রতিনিয়ত প্রবেশ করছে মরণ নেশা ইয়াবা। দেখে বোঝার উপায় নেই। শরীরে তল্লাশি করেও খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। সহজে যাতে খুঁজে না পাওয়া যায় সেজন্য নারী মাদক পাচারকারীরা অভিনব কৌশলে ইয়াবা বহন করছেন। রাষ্ট্রীয় একটি গোয়েন্দা সংস্থার সাম্প্রতিক প্রতিবেদন বলছে, নারী মাদক পাচারকারীরা গোপনাঙ্গের ভেতর ইয়াবা প্রবেশ করে রাজধানীতে নিয়ে আসছেন। এসব নারী মাদক পাচারকারীরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। দীর্ঘক্ষণ গোপন অঙ্গে ইয়াবা রাখার প্রশিক্ষণও আছে তাদের। গোপন অঙ্গে ৮শ’ ইয়াবা রাখার ধারণ ক্ষমতা রয়েছে এসব প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মাদক পাচারকারী নারীদের। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিতে তারা সংবেদনশীল অঙ্গকেই বেছে নিয়েছেন। আকারে ছোট তাই নারী মাদক পাচারকারীরা গোপনাঙ্গের ভেতরেই নিয়ে আসছেন প্রাণঘাতি এ নেশার ট্যাবলট। এক্ষেত্রে তারা এখন পাচারের বাহন হিসেবে ট্রেনকে ব্যবহার করছেন। রাজধানীতে ইয়াবার বড় চালানই এখন রেলপথে আসছে। তবে মাঝে মাঝে তাদের রুট পরিবর্তন হয়।
মহামারী রূপ নিয়েছে ‘ক্রেজি ড্রাগ’ ইয়াবা। শহরের অলিগলি থেকে শুরু করে গ্রামের আনাচে কানাচে পর্যন্ত বিস্তার ঘটেছে নীরব এই ঘাতক ইয়াবা ট্যাবলেটের।
ইয়াবায় সম্পৃক্ততা মিলছে জঙ্গিদেরও। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, তরুণ-তরুণী, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবীদের অনেকেই এখন ইয়াবায় আসক্ত। তবে এদের মধ্যে ছাত্র-ছাত্রী তরুণ-তরুণীর সংখ্যাই বেশি। ইয়াবার ভয়াবহ ধোঁয়া আগামী প্রজন্মকে আজ ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। এ অবস্থায় আগামীতে দেশ মেধাশূন্য হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইয়াবার ভয়াবহ আগ্রাসন নিয়ে সরকার যেমন উদ্বিগ্ন, চিন্তিত অভিভাবকমহলও।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা, এমপি, রাজনৈতিক নেতা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কতিপয় সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত শক্তিশালী সিন্ডিকেট ইয়াবা ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করছে। যে কারণে কোনোভাবেই এর আগ্রাসন রোধ করা যাচ্ছে না। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধ্বংস করে মাদক ব্যবসার এই সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, ইয়াবাসেবীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আর এই ইয়াবা প্রতিদিনই আসছে অবৈধ পথে পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে। দেশের একপ্রান্ত টেকনাফের স্থল ও সাগরপথের ১১ পয়েন্ট দিয়ে দিনে-রাতে ঢুকছে ইয়াবার চালান। আর এই ইয়াবা বিভিন্ন উপায়ে ছড়িয়ে পড়ছে দেশের আরেক মাথা তেঁতুলিয়া পর্যন্ত। রাজধানীসহ সারা দেশের গ্রামগঞ্জে এখন ইয়াবার ব্যবসা জমজমাট। ইয়াবার সর্বনাশা থাবায় লাখো পরিবারের সন্তানদের জীবন এখন বিপন্ন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইয়াবার প্রবেশ রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অতীতের চেয়ে এখন বেশি তত্পর। ২০১৪ সাল পর্যন্ত বিগত সাত বছরে ৯৫ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হলেও শুধু গত বছরই উদ্ধার হয়েছে দুই কোটি পিস এরও বেশি। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, কোস্টগার্ড দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আটক করে এই ইয়াবার চালান। এর পরেও ঠেকানো যাচ্ছে না ভয়ঙ্কর এই মাদকের অনুপ্রবেশ। গত শুক্রবার রাজধানীর কমলাপুর রেল স্টেশনে এক নারীর যৌনাঙ্গের ভেতর ৭শ’ পিস ইয়াবা উদ্ধারের পরই নড়েচড়ে বসে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। অভিনব কৌশলেই লুকানো ছিল এসব ইয়াবা। মুক্তা বেগম (২৮) নামে ওই পাচারকারী বিশেষ পদ্ধতিতে কনডমের ভিতর লুকিয়ে এনেছেন ইয়াবা। দীর্ঘক্ষণ ট্রেনে থাকায় স্টেশনে নামার পর হাঁটায় একটু ব্যতিক্রম দেখলে সন্দেহ জাগে জিআরপির। প্রথমে জিজ্ঞাসাবাদ। পরে নারী পুলিশ দিয়ে তল্লাশি। মুক্তা বেগম চট্টগ্রাম মেইলে চট্টগ্রাম থেকে কমলাপুরে আসেন। প্রাথমিকভাবে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে মুখ খুলতে রাজি হননি তিনি। পরে নারী পুলিশ দিয়ে তার দেহ তল্লাশি করা হয়। দীর্ঘক্ষণ তল্লাশির এক পর্যায়ে উদ্ধার হয় ইয়াবা। গোপন অঙ্গের ভেতরে কনডম দিয়ে মোড়ানো ছিল ৭শ’ পিস ইয়াবা। জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মজিদ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, কমলাপুর স্টেশনে এ পদ্ধতিতে (যৌনাঙ্গের ভেতর কনডম দিয়ে মোড়ানো) ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনা এটাই প্রথম। এ ঘটনার পরই জিআরপি সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। এর আগে কমলাপুর রেলস্টেশনে এক মাদক পাচারকারীর পায়ুপথ এবং আরেক মাদক পাচারকারীর অন্তর্বাসের ভেতর থেকে ইয়াবা উদ্ধার করে জিআরপি। জিজ্ঞাসাবাদে মুক্তা স্বীকার করেছেন এর আগেও তিনি একাধিকবার এভাবে ইয়াবার চালান নিয়ে ঢাকায় এসেছেন। বর্তমানে এভাবে আরও অনেক মাদক পাচারকারী নারী রাজধানীতে ইয়াবা নিয়ে আসছেন বলে তিনি জিজ্ঞাসাবাদে জানান। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গণমাশ্যমকে বলেন, গোপন অঙ্গে ইয়াবা বহন করলে তা খুঁজে বের করা কঠিন। বর্তমানে স্পর্শকাতর জায়গার ভেতরেই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পাচারকারীরা ইয়াবা বহন করে আনছেন। এক্ষেত্রে কয়জনের কাছ থেকেই বা এভাবে তল্লাশি করে বের করা যাবে! এজন্য সীমান্তেই নজরদারি জোরদার করা দরকার। বর্তমানে ইয়াবা পাচারকারীরা নারীদের যৌনাঙ্গসহ সংবেদনশীল অঙ্গ, পুরুষরা পায়ুপথে ইয়াবা বহন করছেন। এছাড়া মাছ, চানাচুরের প্যাকেট, আসবাবপত্রের জয়েন্ট, মোটরসাইকেল, গাড়ির বিভিন্ন অংশ, এলপি গ্যাস সিলিন্ডার, সুপারি, ক্যামেরা, মোবাইল সেট, কুরিয়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন পদ্ধতিতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রবেশ করছে মরণ নেশা ইয়াবা। মূলত মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে দেশে প্রবেশ করে ইয়াবা। এরপর টেকনাফ ও কক্সবাজার থেকে এভাবে রাজধানীসহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে।
এখন স্কচটেপ পেঁচানো ইয়াবা কলার মধ্যে ঢুকিয়ে সে কলা গিলে খাচ্ছে পাচারকারী দলের সদস্যরা। তারপর সীমান্ত থেকে ঢাকায় ইয়াবা পাচার করে নিয়ে আসছে তারা। এ কৌশলে দুই নারী তাদ



